কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির জেরে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। এতে ২১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে পুরুষরা। বন্ধ রয়েছে মাশিকাড়া বাজারের দোকানপাট। আতংকিত শিক্ষার্থীরাও বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়নি।
উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী বাহালুল হক, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এলেও উপস্থিত হয়নি কোনো শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও মাশিকাড়া গ্রাম ঘুরে কোনো পুরুষের দেখা পাওয়া যায়নি। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়নি শিক্ষার্থীরা।
মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী বাহালুল হক বলেন, ‘গ্রামে এখন তেমন কোনো পুরুষ মানুষ নেই। ঘটনার পর এলাকা থমথমে। স্কুলে আসেনি শিক্ষার্থীরা।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ঘটনার পর দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা। এ মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর মামলার বাদী পুলিশ। এতে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় এরই মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমার শিক্ষক আমার সঙ্গে যা করেছে, আমি তা মুখে বলতে পারব না।’ এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন ছাত্রীর বাবা।
এর আগে, গত বুধবার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেন তার কক্ষে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণচেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দিনব্যাপী ওই শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। পরে প্রধান শিক্ষক ও তার মেয়ের জামাইয়ের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরে প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় বহিরাগত লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
একপর্যায়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ে ভাংচুর ও ইটপাটকেল ছুঁড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই দিন রাতেই কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুলসংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন। এ সময় রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।