নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ জুলাইকে সামনে রেখে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সফল করতে ২১ সদস্যের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি’র কার্যালায়ে কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগ’র সাংগঠনিক টিম-৬ এর উদ্যেগে আয়োজিত এক সভায় ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগ’র সাংগঠনিক টিম-৬ এর আহবায়ক ও কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগ’র সভাপতি ম. রুহুল আমিন’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ও চট্রগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক) হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (এমপি)।
সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সচিব এবিএম গোলাম মোস্তফাকে আহবায়ক ও দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলেিগর সাধারন সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সাথে দেবীদ্বার উপজেলা ত্রীবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের পূর্ব ঘোষিত তারিখ ২ জুলাই পরিবর্তন করে ২১ জুলাই ঘোষণা করা হয়। উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে সম্মেলন না হওয়া বাকী ৪টি ইউনিয়নের সম্মেলন উপজেলা সম্মেলনের পুবেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিরি অন্যান্য সদস্যরা হলেন রাজি মোহাম্মদ ফখরুল (এমপি), বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মতিন মুন্সী, মোঃ শেখ আব্দুল আওয়াল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মতিন সরকার, মোঃ হুমায়ুন কবির, আবুল কালাম আজাদ, মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সাজেদা আক্তার মায়া, একেএম শফিকুল আলম কামাল, নজরুল ইসলাম সরকার, এডঃ আয়েশা বেগম, মোঃ ইসমাঈল হোসেন, আব্দুল আলীম, বাবু কালিপদ মজুমদার, এটিএম মেহেদী হাসান, মোসলেহ উদ্দিন মাষ্টার, মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ভুইয়া, মোঃ আনোয়য়ার হোসেন খোকন এবং এডঃ এনামুল হক মাসুম। উক্ত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে জেলা আওয়ামলীগের সাভাপতি ম. রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রোশান আলী মাষ্টার এবং সাবেক মন্ত্রী এএফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সীকে রাখা হয়।
দির্ঘ ২৬ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের খবরে উৎসাহ- উদ্দীপনা নিয়ে নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গত ২৩ মে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণারপর দির্ঘসূত্রীতার জ্যামে আটকে থাকা উপজেলা কমিটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে দুই ডজনের নাম এসেছে। তবে কে সভাপতি- সাধারন সম্পাদক পদে আসছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা।
দেশ স্বাধীনের পর আ’লীগ খুড়ে খুড়ে চললেও সম্মেলনের মাধ্যমে কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখেননি ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত। বিভিন্ন সময়ে দলীয় বৈঠকে সিলেকশনে সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক নেতা-কর্মী। তবে এসময়ে যারা দলের কান্ডারী ছিলেন আ’লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দলের ত্যাগী সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন।
১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে দেবীদ্বার আসনের প্রয়াত এমএলএ বৃহত্তর কুমিল্লা (কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাক্ষণবাড়িয়া) জেলা আ’লীগের সভাপতি শ্রমিক নেতা আব্দুল আজিজ খান দেবীদ্বারে এসে আলী আশরাফ ভূইয়াকে সভাপতি ও এডভোকেট জানে আলমকে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করে যান। তার পর ১৯৯১ সালে সম্মেলন মাধ্যমে অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদকে সভাপতি ও আব্দুল মতিন মূন্সীকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের আলহাজ¦ জয়নুল আবেদীন সভাপতি ও একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত কমিটির পর আর কোন সম্মেলন বা কমিটি গঠন হয়নি।
এসময় বার বার সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিলেও মামা- ভাগ্নের গ্রæপিং এর কারনে অর্থাৎ সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও বর্তমান কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা এবং ওনার ভাগ্নে সাবেক উপ-মন্ত্রী এমপি ও বর্তমান আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল মূন্সীর দলীয় আধিপত্তের দ্বদ্বে আর সম্মেলন হয়নি। পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমে একাধিকবার সম্মেলনের তারিখ করে এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেও সম্মেলন হয়নি। বিরাজমান দ্বদ্বের কারনে আগামী ২১ জুলাই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে।
চলমান ২৬ বছরের ৫১ সদস্যের কমিটির মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, দপ্তর সম্পাদক সহ মারা গেছেন ১৪ জন, দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন ২জন, আ’লীগ উপজেলা কমিটির সম্পাদক ও সদস্য ১৩জনকে কেউ চেনেননা ওরা সবাই নিস্ক্রীয় ও প্রবাসী। বাকী ২১ জনের মধ্যে ৪/৫ জন ছাড়া সবাই নিস্ক্রীয়। বর্তমানে এই কমিটি নামে থাকলেও কার্যত কোন কাজে নেই। এ নিয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলেই ক্ষোভ বিক্ষোভের অন্ত নেই।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, দলীয় কয়েকটি ব্যক্তিকেন্দ্রীক উপদলে বিভক্ত দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগ। গ্রæপিং তুঙ্গে থাকলেও রাজনীতির মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মুন্সী, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তাফা, সাধারন সম্পাদক সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগ এখন এই চারটি গ্রæপে বিভক্ত। যার কারণে তিন বছরের উপজেলা কমিটি চলছে এখন ২৬ বছর ধরে। নেই কোন সম্মেলন, পরিবর্তন নেই কমিটির। নেতৃত্বে আসতে পারছে না অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণ। ক্ষমতাসীন দল হওয়া সত্তে¡ও এখানে নেই কোন দলীয় কার্যালয়। দেশ স্বাধীনের পর (বিভিন্ন সময়ে সিলেকশন কমিটি ছাড়া) ২ কমিটিতে ৫২ বছর। এই উপজেলায় সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২ আগস্ট। সেই সম্মেলনে মো. জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি ও একেএম মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।