কুমিল্লার দেবীদ্বারে যৌথ ব্যবসায় শরীকদারের সাথে টাকা লেন- দেন নিয়ে বিরোধের জের ধরে সরকার মোহাম্মদ সায়েম(৩৮) নামে এক ব্যবসায়িকে অপহরণ পূর্বক নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় নিহত সরকার মোহাম্মদ সায়েমের ভাই আবু কাইছার বাদী হয়ে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ আল- মামুনসহ এজহারনামীয় ৪জন ও অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১২, তারিখ-০৯/০৪/২০২৪ইং।) ঘটনাটি ঘটে সোমবার দিবাগত রাত একটায় দেবীদ্বার উপজেলার বাঙ্গুরী গ্রামের বাজার সংলগ্ন একটি নির্জন সড়কের পাশে। ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার ৯ নং গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার নিউমার্কেট স্বাধীনতা চত্তরের সামনে মানব বন্ধন ও প্রবিাদ সমাবেশ করে নিহতের স্বজনরা। তারা এ ঘটনায় খোরশেদ চেয়ারম্যান ও তার ছেলের ফাঁসি দাবি করেন। নিহত সরকার মোহাম্মদ সায়েম(৩৮) উপজেলার ৯নং গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের চাষারপাড় গ্রামের আব্দুর রহিম সরকারের পুত্র এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মো.ছিদ্দিকুর রহমান ভূইয়ার জেষ্ঠ কণ্যা নাজমুন্নাহার ইভার স্বামী। এছাড়াও হত্যা মামলার আসামী সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম নিহত সায়েমের উকিল শ্বশুর। তাদের পারিবারিক জীবনে আরবী নামে দু’বছরের একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে। নিহত আবু সায়েমের শ্বশুর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন,গতকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে আমার মেয়ের জামাই সায়েমকে অপহরণ করে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ৭/৮জন সন্ত্রাসী। আটক খোরশেদ আলম জানান, দেবীদ্বার বাঙ্গুরী বাজার এলাকায় সায়েম চা খাওয়ার কথা বলে পালিয়ে গেছে। পরে রাত সোয়া ১টায় তাকে খুবই অসুস্থ অবস্থায় বাঙ্গুরী এলাকায় সড়কে পড়ে থাকতে দেখে তাকে আমি ও আমার স্ত্রী উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সায়েমের ছোট ভাই আবু কাউছার সরকার জানান, গত কয়েক বছর আগে আমার বড় ভাই ব্যবসায়ী কাজে টাকার প্রয়োজন হলে সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে মামুনের নিকট থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যৌথ ব্যবসায় পার্টনার করে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই টাকার জন্য মামুন আমার ভাইকে চাপ সৃষ্টি করলে তাকে ৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং বাকি টাকার জন্য একটি খালি চেক দেয়া হয়। পরে মামুন ওই চেক দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করে। ওই মামলা চলমান থাকাবস্থায় মামুন ও তার বাবা আমার ভাইকে সন্ত্রাসী নিয়ে অপহরণ করে। রাতে সায়েম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন আমার পিকাপভ্যানটি (যার নম্বার ১২-০৯৯৭) মামুনকে দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দিবে। এই কথা শুনে আমি পিকআপ ভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দেই। এরপরও আমার ভাইকে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সন্ত্রাসী নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নয়ন মিয়া বলেন, নিহত সায়েমের ভাই আবু কাউছার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। লাশের ছোরত হাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নির্যাতনে নাকি হার্ট এটাকে মারা গেছে তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে। লাশ কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম আটক হয়ে পুলিশের হেফাজতে আছেন।